সারোগেসি পদ্ধতি কি? সারোগেসি পদ্ধতি সম্পর্কে ইসলাম কি বলে

গর্ভাবস্থায় জ্বর,সর্দি,কাশি হলে করণীয়সারোগেসি পদ্ধতি কি এবং এই সমন্ধিত সকল তথ্য সম্পর্কিত প্রবন্ধে আপনাদের স্বাগতম। 'মা' শব্দটি পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান কয়েকটি শব্দের মধ্যে একটি। পৃথিবীর সমস্ত দম্পতি সন্তান প্রাপ্তির জন্য জাগতিক জীবনের সমস্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে চেষ্টা করে থাকেন। কেউ কেউ সফল হন আবার কেউ শারীরিক সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার কারণে সন্তান ধারণে অক্ষম হন এবং মা-বাবার ডাক শোনা থেকে বঞ্চিত থাকেন।


আজকের প্রবন্ধে আমরা এই সম্বন্ধিত একটি সমাধান সারোগেসি পদ্ধতি, এবং সারোগেসি পদ্ধতি সম্পর্কে ইসলাম কি বলে ও এর পাশাপাশি এই সম্পর্কিত আরো কিছু বিষয় এর উপর আলোকপাত করবো। আশা করি প্রবন্ধটি আপনাদের জন্য উপকারি বিবেচিত হবে।

সারোগেসি পদ্ধতি কি?

সারোগেসি শব্দটি বর্তমানে বহুল প্রচলিত শব্দগুলোর মধ্যে একটি। সারোগেসি শব্দটি মূলত সন্তান ধারণ করার একটি বিকল্প পদ্ধতি যা কিনা আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিশেষ এবং চমৎকারী উপায় এবং এটি একটি নিঃসন্তান দম্পতির কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ। সারোগেসি একটি আধুনিক প্রজনন ব্যবস্থা সারোগেসি শব্দের অর্থ হলো 'গর্ভাশয় ভাড়া' সহজ ভাষায় বলতে গেলে একজন নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারণ করার পদ্ধতিকে 'সারোগেসি' বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ এই পদ্ধতিতে কোন কাঙ্খিত বাবা-মা অন্য নারীর গর্ভ ভাড়া করেন।
আর ওই গর্ভধারিনী মাকে বলা হয় সারোগেট। ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন কিংবা আইভিএফ প্রযুক্তি সারোগেসির অন্যতম এক মাধ্যম। এই পদ্ধতিতে নারী দেহ হতে ডিম্বাণু ও পুরুষদের শুক্রাণু দেহের বাইরে টেস্ট টিউব এর মাধ্যমে নিষিক্ত করে নারীর গর্ভশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। নিষিক্ত করণের অর্থ হলো পুরুষের শুক্রাণু এবং নারী ডিম্বাণুর মিলন। সারোগিসির জন্য অবশ্যই একজন সারোগেট মাকে প্রয়োজন হয়। গর্ভকালীন সময়ে সন্তান কাঙ্খিত দম্পতি একজন সারোগেট মায়ের সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকেন।

গর্ভাবস্থায় তার স্বাস্থ্যের সম্পূর্ণ যত্ন নেওয়া, সব খরচের দায়িত্ব ইত্যাদি কাঙ্খিত বাবা-মা এর উপর অর্পিত হয় এবং বাচ্চা জন্ম নেওয়ার পরবর্তী সময়ে একটি পরিমিত অংকের টাকার বিনিময়ে একজন সারোগেট মাদার চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকে। সারোগেসি ব্যবস্থা তখন একটি দম্পতি গ্রহণ করতে পারেন যখন কোন স্ত্রী গর্ভধারনে অক্ষম কিংবা গর্ভধারণর তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও একজন অবিবাহিত পুরুষ কিংবা নারী অথবা সমকামী দম্পতি ও এই পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তান নিতে পারেন।

সারোগেসির বিভিন্ন প্রকার

নিঃসন্দেহে সারোগেসি একটি বাচ্চা কাঙ্ক্ষিত দম্পতির জন্য বর স্বরূপ। আমরা ইতিমধ্যেই সারোগেসি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছি। এখন চলুন আলোকপাত করা যাক সারোগেসি সাধারণত কত প্রকারের হয়ে থাকে এই সম্পর্কিত কিছু তথ্য নিয়ে।
সারোগেসিতে সাধারণত দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
প্রথাগত সারোগেসি (Traditional Surrogacy/Parital Surrogacy): প্রথাগত সারোগেসি আংশিক সারোগেসি কিংবা প্রাকৃতিক বা সরাসরি সারোগেসি নামে পরিচিত। এই পদ্ধতির মাধ্যমে সারোগেটের ডিম্বাণু যৌন মিলনের মাধ্যমে পিতার কিংবা দাতার শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত হয়। এই পদ্ধতিতে মহিলা ডিম্বানু এবং গর্ভ উভয় ভাড়া নেওয়া হয়। সারোগেসি চিকিৎসা প্রথার শুরুটা সাধারণত এ ধরনের পদ্ধতি দিয়েই শুরু হয়। সন্তান ধারণের এই প্রক্রিয়ায় মা কোন ধরনের ভূমিকা পালন করে না যার ফলে সারোগেট মা হয় সন্তানের বায়োলজিক্যাল মাদার।
আধুনিক সারোগেসি/হোস্ট সারোগেসি/ট্রু সারোগেসি/আইভিএফ সারোগেসিঃ হোস্ট সারোগেসির ক্ষেত্রে আইভিএফ কিনবা ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে যারা পিতা-মাতা হবেন তাদের ডিম্বাণু এবং শুক্রাণু নিয়ে ল্যাবে ভ্রুন তৈরি করা হয় এবং তা সারোগেট মাদার এর গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। যার ফলে গর্ভধারণকারী ওই নারীর সাথে শিশুর জিনগত কোন ধরনের সম্পর্ক থাকে না। যেহেতু সারোগেট মাদার এর ডিম্বাণু ব্যবহার করা হয়নি সেক্ষেত্রে সারোগেট মাদার সন্তানের বায়োলজিকাল মা হওয়ার কোন রকম দাবি রাখে না। তবে এক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে আইভিএফ পদ্ধতিতে ডিম্বাণু শুক্রাণু নিষিক্ত করাকে টেস্টটিউব বেবি মনে করা যাবে না।

হোস্ট সারোগেসি কিংবা আধুনিক সারোগেসি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
  • প্রথমত ডিম্বাণু দান অর্থাৎ যিনি মা হতে চাচ্ছেন তিনি কিংবা ডিম্বাণু দাতার কাছ থেকে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় একাধিক ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয়।
  • ল্যাবরেটরীতে সংগ্রহীত ডিম্বাণু এর সাথে বাবার শুক্রাণু নিয়ে ল্যাবে ভ্রুন তৈরি করা হয়।
  • এবং সর্বশেষ প্রতিস্থাপন পদ্ধতিতে ল্যাবরেটরীতে তৈরি ভ্রূণ সারোগেট মাদারের গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়।

সারোগেসি কি হালাল?

যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে (এন এইচ এস) এর সংজ্ঞা অনুযায়ী সারোগেসি হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে শারীরিক কারণে গর্ভধারণ করতে অক্ষম কোন যুগলের কারণে একজন নারী গর্ভধারণ করে। মূলত এই পদ্ধতিতে সন্তান কাঙ্ক্ষিত বাবা-মায়ের শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু নিয়ে ল্যাবে ভ্রুন তৈরি করা হয় এবং তা সারোগেট মাদার কিংবা গর্ভধারণকারী নারীর গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। 

ইসলামী সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে যে নিজের জৈবিক চাহিদা পূরণ ও সন্তান গ্রহণের মাধ্যম অথবা পন্থা শুধুমাত্র তোমার বিবাহিত স্ত্রী আর এর বাইরে তুমি অন্য কোন নারীকে কামনা করতে পারবা না কিংবা অন্য কোন নারীর থেকে নিজের চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারবা না সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে এটি সম্পূর্ণরূপে হারাম। অপরদিকে নারীর জরায়ু ব্যবহার একমাত্র স্বামীর জন্য সংরক্ষিত। 
কোন পর পুরুষের জন্য কোনভাবে একজন নারীর জরায়ু বা গর্ভ ব্যবহার করার কোন রকমের সুযোগ নেই। সুতরাং সারোগেসি পদ্ধতিতে নারীর গর্ভ ভাড়া দেওয়া এবং কোন দম্পতির ভাড়া নেওয়া উভয়টি নাজায়েজ অর্থাৎ হারাম।শুধু এই নয় বরং সারোগেসির মাধ্যমে সমকামী দম্পতিও সন্তান নিতে পারছে যা কিনা সমাজের একটি মৌলিক অবক্ষয়। আবু দাউদ শরিফে হজরত রোওয়াইফা ইবনে সাবেত আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে সারোগেসি নিষিদ্ধের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। 

যেখানে (সা.) বলেন, আল্লাহ এবং আখেরাতে ঈমান রাখে এমন কারো জন্য বৈধ নয় যে, সে তার পানি অন্যের ক্ষেতে সিঞ্চন করবে। অর্থাৎ অন্যের জরায়ুতে তার বীর্য রাখবে। (আবু দাউদ : ২১৫৮)।

এর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে আরো কিছু প্রমাণ্য তথ্যের মধ্যে একটি হলোঃ
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আমি আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি।’ (সুরা ইসরা : ৭০)। এ জন্য মানুষের কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করা বা ভাড়া দেওয়া জায়েজ নেই।

মহান আল্লাহ জৈবিক চাহিদা পূরণ ও সন্তান গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের সবাইকে অবগত করেছেন।
তিনি (সূরা মুমিনুন, আয়াত: ৫-৭ ) আরো ইরশাদ করেছেন ‘আর যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে রাখে সংরক্ষিত, নিজেদের স্ত্রী বা অধিকারভুক্ত দাসীগণ ছাড়া, এতে তারা হবে না নিন্দিত, অতঃপর কেউ এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করলে, তারাই হবে সীমালঙ্ঘনকারী। ’

অনেকে এই বিষয়ে দাবি করেন যে সারোগেসি পদ্ধতিতে একজন নারী ও পুরুষের মাঝে কোন রকম শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় না তাহলে একে বিবাহ বহির্ভূত ব্যভিচার বলে আখ্যা দেওয়া সঠিক নয় এবং এটি মোটেও পাপ কাজ নয়। কিন্তু বিষয়টি মোটেও তা নয় একটি হাদিসের মাধ্যমে যদি তা বর্ণনা করা হয় তাহলে এটি যে ভুল ধারণা তার প্রমাণিত হবে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘তোমাদের স্ত্রী তোমাদের ফসলক্ষেত্র। সুতরাং তোমরা তোমাদের ফসলক্ষেত্রে গমন করো, যেভাবে চাও। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২৩)

হযরত মুহাম্মদ (সা:) এই বিষয়ে বলেছেন রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, তার জন্য বৈধ নয় অন্যের ফসলে নিজের পানি সেচন করা। ’

অতএব এ ধারণাটি একদমই স্পষ্ট ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে সারোগেসি জায়েজ নয় আর এক কথায় বলতে গেলে এ ধরনের পদ্ধতি উপকারের চেয়ে ক্ষতি এবং মহান আল্লাহ তায়ালার নিরাশা ডেকে আনবে এবং এর পাশাপাশি মানব বংশধারার পবিত্রতাকেও হুমকিতে ফেলবে। তাই প্রতিটি মুসলিমের উচিত এই বিষয়ে অবশ্যই সচেতন থাকা এবং সতর্ক থাকা।

সারোগেসি পদ্ধতি ইসলাম কি বলে

বর্তমান সময়ের কথা বিবেচনা করলে দেখা যায় সারোগেসি পদ্ধতিতে সন্তান গ্রহণ করার প্রবণতা পৃথিবীর এক শ্রেণীর মানুষের কাছে বেড়েই যাচ্ছে। যেহেতু কোন পর পুরুষ কোন পরিস্থিতিতেই একজন নারীর জরায়ু বা গর্ভ ব্যবহার করতে পারবেনা কারণ নারীর জরায়ুর ব্যবহার একমাত্র স্বামীর জন্য সংরক্ষিত থাকে এবং এর পাশাপাশি ইসলামী সুস্পষ্ট ভাবে বর্ণিত আছে যে নিজের জৈবিক চাহিদা পূরণ ও সন্তান গ্রহণের মাধ্যম অথবা পন্থা একজন পুরুষের জন্য শুধুমাত্র তার বিবাহিত স্ত্রী এবং এর বাইরে সে অন্য কোন নারীকে কামনা করতে পারবে না সুতরাং সারোগেসি পদ্ধতি ইসলামের দিক থেকে বিবেচনা করলে সম্পূর্ন নাজায়েজ। এই সম্পর্কে ইসলাম আরো বলে-
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে যে “তিনিই তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়। তারপর যখন সে তার সঙ্গে সংগত হয় তখন সে এক হালকা গর্ভধারণ করে এবং এটা নিয়ে সে অনায়াসে চলাফেরা করে। অতঃপর গর্ভ যখন ভারী হয়ে আসে, তখন তারা উভয়ে তাদের রব আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, যদি আপনি আমাদের এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দান করেন, তাহলে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।” (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৮৯)

পবিত্র কুরআনের সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে- "আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই। তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন; তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন।অথবা পুত্র-কন্যা উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান।"সূরা আশ্-শূরা (৪২: ৪৯-৫০)।

ইসলাম মানুষের বংশধরের পবিত্রতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। আর যে নারীর জরায়ুতে অন্যের শুক্রাণু আছে বা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে সে অবস্থায় তাকে বিয়ে করা বংশধরের পবিত্রতা অস্বচ্ছ করে ফেলে এবং এর পাশাপাশি পুরুষের জন্যও বিবাহিত স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন নারীর শরীরের শুক্রানু প্রবেশ করানো জায়েজ নয় তা হোক শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে কিংবা অন্য কোন ভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে। 

এছাড়াও পবিত্র কোরআনের আলোকে বিবেচনা করলে সারবিসির মাধ্যমে জন্মের শিশুর আসল মাকে হবেন এ বিষয়ে জটিলতা থেকেই যাই। যেহেতু পবিত্র কোরআনের বিধান অনুযায়ী জন্মদাতা নারী হয় সন্তানের আসল মা। 

পবিত্র কোরআনে এই সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে ‘তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে জিহার করে (অর্থাৎ স্ত্রীকে বলে যে তুমি আমার জন্য আমার মায়ের পিঠের মতো) তাদের স্ত্রীরা তাদের মা নয়। তাদের মা তো শুধু তারাই, যারা তাদের জন্ম দিয়েছে। তারা অবশ্যই ঘৃণ্য ও মিথ্যা কথা বলে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপ মোচনকারী, বড়ই ক্ষমাশীল। ’ (সুরা : মুজাদালাহ, আয়াত : ২)

এছাড়াও সারগেসি পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে বংশ পরিক্রমায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং এর পাশাপাশি পরপুরুষের বীর্য বা শুক্রাণু পরনারীর জরায়িত প্রবেশ করানো মানে যিনা করা।
হাদিস শরীফে এ বিষয়ে বর্ণিত আছে -
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং কেয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তার জন্য নিজের পানি (বীর্য) দিয়ে অপরের ক্ষেত সেচ করা বৈধ নয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১১৩১)

সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে সারোগেসি পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তান জন্মদান ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নাজায়েজ এবং শরিয়ত বিরোধী একটি কাজ এবং এটি পরিত্যাগ করা ও এই সম্পর্কে অন্যজন কেউ সচেতন করা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর জন্য কর্তব্য। আমাদের অবশ্যই শয়তানের এরকম সূক্ষ্ম প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকতে হবে এবং মহান আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই আমাদের হেফাজত করবেন।

সারোগেসি পদ্ধতিতে খরচ

আইভিএফ পদ্ধতি ব্যবহার করে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে ভারতে খরচ হয় আনুমনে ৬০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে ক্ষেত্র বিশেষে অবশ্যই তা ভিন্ন হতে পারে অনেক জায়গায় সারোগেসির ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। এর পাশাপাশি আপনাকে সারোগেট মাদারের গর্ভকালীন অবস্থায় চিকিৎসা, যত্ন সহ সম্পন্ন আর্থিক দায়ভার বহন করতে হবে। 

কিন্তু হিসাবটা যে শুধুমাত্র ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত সীমাবদ্ধতা কিন্তু নয়। সারোগেসি পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তান পেতে অনেক ক্ষেত্রে সারোগেট মাদারের আনুষঙ্গিক খরচের পরিমাণ ৩০ লক্ষ টাকা অব্দি হতে পারে। এই সম্পর্কিত নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই ভারতের স্বনামধন্য এবং নির্ভরযোগ্য এই সম্বন্ধিত চিকিৎসা প্রদানকারী কোন হাসপাতালের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

বাংলাদেশে কি সারোগেসি বৈধ

বাংলাদেশের টেস্টটিউব বেবির আইনগত বৈধতা থাকলেও মূলত সারোগেসি এখন পর্যন্ত পায়নি। ২০০৫ সাল হতে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভারতে কমার্শিয়াল সারোগেসির প্রচলন অনেক বেশি পরিমাণে ছিল। তবে ২০১৬ সালে সারোগেসি বিল পাস হওয়ার পর বাণিজ্যিকভাবে তা নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিক সারোগেসি প্রচলিত আছে আবার অনেক দেশে এটি অবৈধ। ইসলামী আইনের কথা বিবেচনা করলে টেস্টটিউব বেবি হালাল হলেও সারোগেসি সম্পূর্ণ হারাম। 

তবে গোপনভাবে বাংলাদেশের অনেক স্থানেই সারোগেসি পদ্ধতি চালু রয়েছে। গোপনে হলেও বাংলাদেশের গর্ভ ভাড়া নিয়ে সন্তানের বাবা-মা হওয়া ঘটনা ঘটছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত সহ উন্নত বিশ্বে এখন বহু প্রচলিত এই প্রথা এবং আমাদের দেশের অনেক দম্পতি ভারতে গিয়ে গর্ভ ভাড়া নিয়ে সন্তান জন্মদান দিচ্ছেন।

সারোগেসি কি নিরাপদ

যদি কেউ সারোগেসি বিবেচনা করছেন তাহলে তাকে অবশ্যই সারোগেট হওয়ার সাথে সম্পর্কিত সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। যেকোনো গর্ভাবস্থার মতোই সারোগেসি পদ্ধতিতেও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি রয়েছে। বেশিরভাগ গর্ভবতী মায়েদেরই হালকা বা মাঝারি উপসর্গ থাকে যেমন বমি বমি ভাব হওয়া কিংবা বমি হওয়া, সামান্য ফোলা ভাব, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির ফলে গঠিত সমস্যা , ক্লান্তি ইত্যাদি। 

তবে বিরল ক্ষেত্রে গর্ভবতী হওয়ার আগে সুস্থ থাকলেও মৃত্যু সহ আরো গুরুত্ব চিকিৎসা ও জটিলতা অনুভব করে। এই ঝুঁকি গুলো সারোগেসি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আলোচনা করা হবে এবং আগে থেকেই সাবধান করে দেয়া হবে। এর পাশাপাশি সারোগেট হওয়া সময় সাপেক্ষ এবং আবেগপ্রবণ হতে পারে।

সারোগেসি বাচ্চার লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়?

স্বাভাবিক গর্ভাবস্থার কথা বিবেচনা করলে ভবিষ্যৎ সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করা অসম্ভব। কিন্তু সারোগেসির ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়। সারোগেসি লিঙ্গ নির্বাচন সহ অভিপ্রেত পিতামাতার জন্য অতিরিক্ত জৈবিক বিকল্প সরবরাহ করে থাকে। সফল গর্ভাবস্থার জন্য সম্ভাব্য এবং সর্বোত্তম অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য প্রায় ভ্রূণগুলো পরীক্ষা করা হয়। বলা যায় ভ্রুন এর লিঙ্গ প্রায়ই জানা যায় এবং সন্তান কাঙ্খিত পিতা-মাতা চাইলেই সাধারণত কোন ভ্রুনটি সারোগেট মাদারের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করতে চান তা নির্বাচন করতে পারেন। সুতরাং চাইলেই সারোগেসি পদ্ধতিতে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়।

আমাদের শেষ কথা

সারোগেসি পদ্ধতি নিশ্চিত রূপে একটি নিঃসন্তান দম্পতির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। মাতৃত্বের স্বাদ সকল মানুষ গ্রহণ করতে চাই এবং সকল পুরুষের চাই বাবা ডাক শুনতে। এই চমৎকারী পদ্ধতি আশানুরূপভাবে তাদের সমস্যা দূর করলেও আমাদের ইসলামে এর কোন ধরনের বৈধতা নেই। বরং এটি নাজায়েজ। সুতরাং ইসলাম ধর্ম অনুসারী হবে সন্তান জন্মদানের জন্য এই পদ্ধতি অনুসরণ করা আপনার জন্য একদমই উচিত হবে না। 

তবে আপনার ধর্মে যদি এই বিষয়ে কোন রকম বাধা নিষেধ না থাকে এবং আপনি চান সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান পৃথিবীতে এনে জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সুন্দর একটি অধ্যায় এর সূচনা ঘটাতে তাহলে অবশ্যই আপনি প্রক্রিয়াটি অবলম্বন করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে আইনগত বৈধতা মেনে সাবধানতা ও সতর্কতার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আশা করি উপরিউক্ত তথ্য গুলো কাঙ্খিত পাঠকদের উপকারে আসবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইজি গ্রাব ওয়েব এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url